প্রশান্ত সুভাষ চন্দ, চ্যানেল এস ডেস্ক:
ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র ৯ মাস। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে নোয়াখালীতে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সভা-সমাবেশ ও ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে জানান দিচ্ছেন নিজেদের। দলীয় কর্মকান্ড পালন করছেন সর্বোচ্চ উজাড় করে দিয়ে। এক কথায় রাজনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের শক্ত অবস্থান তৈরীর জন্য। অপরদিকে থেমে নেই আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সহ মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। রাজপথ দখলে রেখে নিজেদের জানান দেয়ার চেষ্টা করছেন। নজর কাড়তে চাইছেন দলের হাইকমান্ডের। তবে নোয়াখালীর বেশীরভাগ আসনেই দলীয় কোন্দল থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে নেই দলটি। তবুও দলীয় নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস, দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের কারনে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারও ক্ষমতায় বসাবে। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিশ্বাস সরকার দলের অনিয়ম, দূর্নীতি, লুটপাট ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে আর ভোট দিবেনা। মানুষ পরিবর্তন চায় বলেও বিশ্বাস করেন তারা। তবে বিএনপির মধ্যে প্রকাশ্য নির্বাচনী কর্মকান্ড পরিলক্ষিত না হলেও অপ্রকাশ্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারাও। একসময়ে বিএনপির দূর্গ হিসেবে খ্যাত নোয়াখালীর সকল আসন উদ্ধার করতে চায় দলটি। সরেজমিন নোয়াখালীর ৬টি আসন ঘুরে সেই চিত্রই উঠে এসেছে “চ্যানেল এস” এর প্রতিবেদনে-
নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) : এ আসনে সরকার দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম। পরপর দুই মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে আসন্ন নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাবেন। তবে তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম। আসন্ন নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-আংশিক সোনাইমুড়ী): এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম ।আসন্ন নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে ধারনা স্থানীয়দের। এছাড়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি ও নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক মনোনয়ন চাইবেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। আসনটিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক এমপি জয়নুল আবদীন ফারুক মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানা গেছে।
নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ): এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তবে সাবেক সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদের ছোট ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মিনহাজ আহমেদ জাবেদও মনোনয়ন চাইবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ বি এম জাফর উল্লার নামও আলোচিত হচ্ছে নেতাকর্মীদের মাঝে। আসনটিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লা বুলুই হতে পারেন একমাত্র প্রার্থী।
নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর): এ আসনে সরকারদলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন জেলা আওয়ামী লীগর সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। একটানা তিনবার এ আসনের সংসদ সদস্য তিনি। বিভিন্ন কারনে তিনি বিতর্কিত হলেও আসন্ন নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন পেতে পারেন বলে ধারনা করছেন নেতাকর্মীরা। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আলম চৌধুরী সেলিম, সাবেক স্পিকার আব্দুল মালেক উকিলের ছেলে গোলাম মহি উদ্দিন লাতু, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্যাহ খান সোহেলও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আসনটিতে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ শাহজাহান।
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আসনটিতে তার বিকল্প কোন প্রার্থী নেই। আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে অনেকের নাম শোনা গেলেও শক্ত প্রার্থী হিসেবে মাঠে অবস্থান করছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম। দলীয় নেতাকর্মীরাও তাকে চাইছেন। তবে প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা জসিম উদ্দিন মওদুদ ও জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির ছোট একটি অংশ।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমীরও মনোনয়ন চাইবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। অন্যদিকে আসনটিতে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন সাবেক এমপি প্রকৌশলী ফজলুল আজিম।
মন্তব্য করুনঃ