• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১৫ই আশ্বিন ১৪৩০ রাত ০৯:০৪:১৪ (30-Sep-2023)
  • - ৩৩° সে:

ব্যবসা–বাণিজ্যে সমস্যা কমানোর তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের

চ্যানেল এস ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র বছরে ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। বিশাল এই বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে মার্কিন কোম্পানিগুলোর আগ্রহ আছে। তবে সেই বিনিয়োগ পেতে হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে গতকাল সোমবার এক সেমিনারে এই মন্তব্য করেছেন। জন ফে বলেন, দুই-তিন দিন পর পর মার্কিন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইছে। যদিও বাংলাদেশে ব্যবসারত মার্কিন কোম্পানিগুলো রাজস্ব ও আয় প্রত্যাবাসনের মতো জটিল সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া মেধাস্বত্ব আইনের দুর্বল প্রয়োগ, সরবরাহ এবং পরিবহনসংক্রান্ত সমস্যাও আছে। এসব সমস্যার সমাধানে জোর দিয়ে জন ফে বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা ও বায়োসায়েন্সে মার্কিন বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মার্কিন বিনিয়োগের সুযোগ আছে। দুই-তিন দিন পর পর মার্কিন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইছে। যদিও বাংলাদেশে ব্যবসারত মার্কিন কোম্পানিগুলো রাজস্ব ও আয় প্রত্যাবাসনের মতো জটিল সমস্যার মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে এ সেমিনারটি আয়োজন করে। ইআরএফের ঢাকার পুরানা পল্টনের কার্যালয়ে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণা করে। এর চার মাসের মাথায় গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভিসা বিধিনিষেধের কারণে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে জন ফে কোনো মন্তব্য করেননি। সেমিনারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি–সুবিধা দেওয়া না–দেওয়া নিয়ে বক্তব্য দেন তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে বলেন, জিএসপি ফিরে পাওয়ার পথনকশায় (রোডম্যাপ) শ্রমিক সংগঠনের নিবন্ধন সহজীকরণ এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) শ্রম আইন বাস্তবায়নের বিষয়টি এখনো হয়নি। কোনো দেশকে জিএসপি দেওয়া না–দেওয়া মার্কিন কংগ্রেসের এখতিয়ার। আবার শুল্ক কমানোও অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) আলোচনা আপাতত নেই। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এফটিএ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য। গত বছর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে। এ ছাড়া দেশটি থেকে সর্বশেষ ২০২২–২৩ অর্থবছরে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসে। মূল প্রবন্ধে এমন তথ্য দিয়ে বেসরকারি গবেষণাপ ্রতিষ্ঠান র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৮৩ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। বাকি ১৭ শতাংশ অন্যান্য পণ্য। এই হিসেবে বলা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে খানিকটা বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু বছরে ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে সেহেতু বিশাল এই বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। আরেক বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম বাজার হবে বাংলাদেশ। আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে এ দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যাও দ্বিগুণ হবে। ফলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিনিয়োগ টানতে করব্যবস্থা সহজ করতে হবে।তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি ইপিজেডে শ্রম অধিকার কার্যকর করতে শ্রম আইন সংশোধনের কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইন সংশোধন হয়ে যাবে। নতুন ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ শেষে ডিসেম্বরে কার্যকর হবে। জিএসপি–সুবিধা ফিরে পেতে পথনকশা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু সেই পথ শেষ হচ্ছে না।’ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান, শাশা ডেনিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।