• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বিকাল ০৫:৪৪:৫১ (21-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

পাঁচ দশকে রেকর্ড তাপমাত্রা যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি


বুধবার ১লা মে ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



পাঁচ দশকে রেকর্ড তাপমাত্রা যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি

ছবি: সংগৃহীত

চ্যানেল এস ডেস্ক: 

মাস জুড়ে চলমান ভয়াবহ দাবদাহে প্রায় দুর্যোগের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তাপযন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছে মানুষ। চোখ-মুখ ঝলসানো বাতাসে যেন আগুনের ফুলকি। প্রকৃতিতে মরুর গনগনে তপ্ত উত্তাপ। জলীয় বাষ্পের আধিক্য দাবদাহকে দাহ্য করে তুলেছে। রুদ্র দহনে বিপর্যস্ত জনজীবন-প্রকৃতি-প্রাণিকুল। 

বৃষ্টি নেই, বজ্রগর্ভ ঝড় নেই। কেবল তাতানো সূর্যের খরতাপে প্রকৃতির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে সবকিছু। অতি গরমে মানুষ মরছে। বেঁকে যাচ্ছে রেললাইন। গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। খরায় ঝরছে আম-লিচুর গুটি, কাঁঠালের মুচি। মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির। বহু এলাকায় নলকূপে পানি উঠছে না। গতকালও অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে হিট স্ট্রোকে। মারা যাচ্ছে গবাদি পশু। গতকাল মঙ্গলবার চলতি বছরের সর্বাধিক অসহনীয় দাবদাহকবলিত ছিল দেশ। বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগ যেন অগ্নিচিমনিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে গত ৫২ বছরের মধ্যে গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় এদিন থার্মোমিটারের পারদ উঠেছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এছাড়া গতকাল রাজশাহীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঈশ্বরদীতে ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বগুড়ায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাদলগাছী ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তাড়াশ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনা ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মংলা ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সাতক্ষীরা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ৪২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, টাঙ্গাইল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফরিদপুর ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গোপালগঞ্জ ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি হলেও দুপুরের পর অনুভূত তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, চলতি এপ্রিল মাসটি ছিল দেশের ইতিহাসে অন্যতম উষ্ণ মাস। টানা ৩০ দিন তাপপ্রবাহ দেখল বাংলাদেশ। এপ্রিলের এ সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু মাস জুড়েই গড়ে সারা দেশে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রির ওপর। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। 

চুয়াডাঙ্গায় উঠেছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে। এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এত দিন দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। গতকাল মঙ্গলবার তা ভেঙে গেল। আজিজুর রহমান বলেন, এরকম তাপমাত্রার অবস্থা আরো কয়েক দিন চলবে। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির আশপাশে বা এর বেশিও হতে পারে। মে মাসের ২-৭ তারিখের ভেতর তাপমাত্রা প্রশমিত হয়ে আসবে বৃষ্টির ফলে। সে সময়ে পুরো বাংলাদেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ২ মের আগে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই। 

যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 

যশোর অফিস জানায়, খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, গতকাল দুপুর ৩টায় যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া দপ্তর যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে, যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এদিকে গত কয়েক দিন ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল হয়ে পড়েছে যশোরের সাধারণ মানুষের জনজীবন। শহরে দিনে লোকজনের উপস্থিতি কমে গেছে। তবে তিন চাকার চালকরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মুজিব সড়ক, দড়াটানা মোড় থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়কে তীব্র দাবদাহে প্রায় জনশূন্য দেখা গেছে। মানুষের উপস্থিতি যেমন কম, তেমনি যানবাহনের উপস্থিতিও কম। কিছু ইজিবাইক, রিকশা দেখা গেলেও যাত্রীর অপেক্ষায় মোড়ে মোড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে চালকদের। শহরের বকুলতলায় বসে ছিলেন রিকশাচালক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। এত গরমে মানুষ বের হবে কী করে? তীব্র গরমে বেঁকে গেছে রেললাইন

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের পূবাইল ও আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশন মধ্যবর্তী এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তীব্র গরমে রেললাইন বেঁকে যায়। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আপ লাইনে এক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। খবর পেয়ে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেললাইন মেরামত করলে দুপুর দেড়টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

পূবাইল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহমান জানান, প্রচণ্ড তাপে পূবাইল ও আড়িখোলা স্টেশনের মধ্যবর্তী ২৮৩/৪-৫ কিলোমিটার অংশে একটি রেল বেঁকে যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস আড়িখোলা স্টেশনে আটকা পড়ে। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেললাইন মেরামত করেন। তারপর কালনী এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা আটকা থাকার পর ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।  

রেলওয়ের টঙ্গীর বুপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম জানান, ঘটনাটি আতঙ্কিত হওয়ার  মতো কিছু ছিল না। ৪২ ফুটের মতো রেললাইন বেঁকে গিয়েছিল। বিষয়টি জানার পর মেরামতকর্মীরা কচুরিপানা, কাদামাটি ও পানি ঢেলে বেঁকে যাওয়া লাইন ঠাণ্ডা করে মেরামত করে। মেরামতের পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ