• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১ বিকাল ০৫:২৮:৫৬ (27-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত "নাফাখুম"


শুক্রবার ৬ই অক্টোবর ২০২৩ বিকাল ০৫:৩৭



বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত "নাফাখুম"

ফাইল ছবি

নাফাখুম জলপ্রপাত, বান্দরবান জেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। মারমা ভাষায় খুম মানে জলপ্রপাত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত।

বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি একটি মারমা অধু্যসিত এলাকা। বান্দরবন হতে ৭৯ কিঃমিঃ দুরে অবস্থিত থানচি। সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত থানচি বাজার। এই সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রীর দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয় নৌকা বেঁয়ে। কারণ নদীটি রেমাক্রী হতে থানচির দিকে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে এসেছে এবং এই জন্য এখানে অনেক স্রোত থাকে। নদীর কিছুদূর পর পর ১-২ ফুট এমন কি কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট পর্যন্ত ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে। নদীর দুপাশে সবুজে মোড়ানো উচু উচু পাহাড় রয়েছে। কোন কোন পাহাড় এতই উচু যে তার চূড়া ঢেকে থাকে মেঘের আস্তরে। সবুজে ঘেরা সে পাহাড়ে মাঝে মাঝে দু একটি উপজাতী বসতঘর দেখা যায়। পাহাড়ের ঢালুতে টিন আর বেড়ার ঘর গুলো মারমা ভাষায় বলে ‘খুম’ মানে হচ্ছে জলপ্রপাত। রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টার হাঁটা পথ দূরত্বে এই জলপ্রপাত।

ভ্রমণ সময়

সারা বছর নাফাখুম জলপ্রপাত দেখতে যাওয়া যায়। তবে বর্ষায় প্রায়ই সাঙ্গু নদীর পানি প্রবাহ বিপদসীমার উপরে থাকলে নাফাখুম যাওয়ার জন্যে প্রশাসন থেকে অনুমতি দেওয়া হয় না। শীতকালে নাফাখুমে পানি অনেকটাই কম থাকে। তাই সবচেয়ে আদর্শ সময় বর্ষার পর পর ও শীতকালের আগের মধ্যবর্তী সময়টুকু (সেপ্টেম্বর – নভেম্বর)।

যাতায়াত

নাফাখুম যেতে বান্দরবান জেলা সদরেই আসতে হবে প্রথম। তারপর বান্দরবান থেকে থানচি, থানচি থেকে নৌকায় সাঙ্গু নদীপথে রেমাক্রি বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে নাফাখুম যেতে হবে।

ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে এস. আলম, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৫৫০-৬৫০ টাকা ও এসি ৯৫০-১৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বান্দরবান যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে প্রতিদিনই সোনার বাংলা, সুবর্ণ, মহানগর ইত্যাদি ট্রেন চটগ্রাম যায়। শ্রেনী ভেদে ভাড়া ৩২০-১৫০০ টাকা।

চট্টগ্রামের বদ্দারহাট বাস স্টেশন থেকে বান্দরবানে যাওয়া যায়। পুবালি ও পূর্বানী নামের দুটি বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া লাগে। এছাড়া ধামপাড়া বাস স্টপেজ থেকে বান্দরবান যাওয়া যায়। চাইলে রেন্ট এ কারে করেও চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাওয়া যাবে সেক্ষেত্রে মাইক্রোবাসের ভাড়া ২,৫০০-৩,৫০০ টাকা।

বান্দরবান থেকে থানচি
বান্দরবান থেকে থানচি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার। বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়া যায় দুইভাবে; বাসে কিংবা রিজার্ভ জীপে। বান্দরবানের থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে এক ঘণ্টা পর পর লোকাল বাস থানচির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি বাস ভাড়া ২০০ টাকা, সময় লাগবে ৪-৫ ঘণ্টা। রিজার্ভ জীপ/চান্দের গাড়িতে গেলে খরচ হবে ৫,৫০০-৬,০০০ টাকা, সময় লাগবে ৩-৩.৫ ঘণ্টা। এক গাড়িতে ১২-১৪ জন অনায়াসে যাওয়া যায়। থানচি যাওয়ার সময় পথে পরবে মিলনছড়ি, চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরি।

থানচি থেকে রেমাক্রি
থানচি পৌঁছে অবশ্যই একজন গাইড ঠিক করতে হবে। গাইড ছাড়া নাফাখুম ভ্রমণে যাওয়া যাবে না। উপজেলা প্রসাশন থেকে অনুমতি পাওয়া যে কাউকে গাইড হিসেবে নেওয়া যাবে। সাথে গিয়ে পরদিন থানচি ফিরে আসা পর্যন্ত গাইড ফি ১৫০০টাকা। গাইড ঠিক করার ব্যাপারটা থানচি গিয়েও করা যায় অথবা আগে থেকে পরিচিত কোন গাইডকে কথা বলে ঠিক করে রাখা যায়। গাইড ঠিক করার পর থানচি বিজিবি ক্যাম্প/থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে। ভ্রমণকারী সকল সদস্যের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, কোথায় যাবে, কয়দিন থাকবে এইসব তথ্য কাগজে লিখে জমা দিতে হবে। আর এইসব কাজে গাইড সাহায্য করবে। বিকেল ৩ টার পর থানচি থেকে রেমাক্রি যাবার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই সেইদিনই রেমাক্রি যেতে চাইলে অবশ্যই ২টার মধ্যে থানচি থাকতে হবে। তা না হলে ঐদিন থানচি থেকে পরদিন সকালে রেমাক্রি যেতে হবে।

অনুমতি পাওয়ার পর থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হবে। এক নৌকায় ৪-৫ জন যাওয়া যাবে। রেমাক্রি পর্যন্ত নৌকা রিজার্ভ যাওয়া ও পরদিন আসা সহ ভাড়া ৪,০০০-৫,০০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। সাঙ্গুতে পানি কম থাকলে কিছু জায়গায় নৌকা থেকে নেমে হেঁটে যেতে হবে তখন সময় একটু বেশি লাগতে পারে। পথেই পরবে পদ্মমুখ, ভূ-স্বর্গ খ্যাত তিন্দু, রাজাপাথর বড়পাথর এলাকা ও রেমাক্রি ফলস। গাইড এর যাওয়া, থাকা খাওয়া ও অন্যান্য খরচও নিজেদের বহন করতে হবে।

রেমাক্রি থেকে নাফাখুম
সাধারণত খুব সকালে বান্দরবান থেকে রওনা দিলে রেমাক্রি পৌছাতে বিকেল হয়ে যায়। সেইদিন আর নাফাখুম যাওয়া সম্ভব হয় উঠে না। সেই রাত রেমাক্রি বাজার থেকে পরদিন সকালে নাফাখুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। রেমাক্রি থেকে স্থানীয় আরও একজন গাইড ৫০০ টাকা দিয়ে নিতে হবে। থানচি থেকে আসা গাইডই ঠিক করবে। রেমাক্রি থেকে রেমাক্রি খাল ধরে হেঁটে নাফাখুম যেতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা। তবে সময় কত লাগবে তা নির্ভর করবে ভ্রমণকারী সঙ্গীদের হাঁটার গতির উপর আর মৌসুনের উপর। বর্ষায় রেমাক্রি খালে পানি অনেক বেশি থাকে। কোথাও কোমর পানি কিংবা কোথাও আরও বেশি। কিছু জায়গায় রেমাক্রি খাল এপার ওপার করতে হবে। পানি বেশি থাকলে এই পারাপারে সময় বেশি লাগবে। এইসব জায়গায় গাইড সাহায্য করবে।

রাত্রিযাপন

থানচিতে ভালো কোথাও থাকতে চাইলে বিজিবি নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত অবকাশ কেন্দ্রে থাকা যাবে। রুম ভাড়া ১৫০০-৩০০০ টাকা এর মধ্যে। এছাড়া থানচি বাজার ও আশেপাশে কিছু কটেজ ও রেস্টহাউজ ধরণের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা আছে। মান অনুযায়ী দিন প্রতি ভাড়া ২০০-১০০০ টাকার মধ্যে। রেমাক্রি বাজারে আদিবাসীদের ঘরে থাকার ব্যবস্থা আছে। সাঙ্গু নদীর পাশে আদিবাসীদের ঘরে বা রেস্ট হাউজে কয়েকজন মিলে থাকতে হলে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১৫০ টাকা। এছাড়া নাফাখুম পাড়াতে আদিবাসীদের ঘরেও থাকার ব্যবস্থা আছে।

খাওয়া দাওয়া

থানচি বাজারে মোটামুটি মানের কিছু খাওয়ার হোটেল আছে। রেমাক্রিতে আদিবাসী বাড়িতেই খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আগে থেকে বলে রাখলেই হবে। অনেকটা প্যাকেজ সিস্টেমে খাওয়ার ব্যবস্থা। সাধারণত ভাত, ভর্তা, ভাজি ও ডিম খেতে খরচ হবে ৮০ টাকা, ডিমের বদলে মুরগি খেতে চাইলে খরচ হবে ১২০ টাকা। আগে থেকেই গাইডকে দিয়ে জানিয়ে রাখতে হবে কি খাবেন ও কতজন খাবেন।

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ