• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১১:৪০:৫৮ (29-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:

বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব


শুক্রবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২৪ দুপুর ১২:৪৬



বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

ছবি: সংগৃহীত

বিনোদন ডেস্ক:

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সম্পূর্ণ ধংসস্তুপের ওপর ১৯৫১ সালে বার্লিনে প্রথম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বলা যায় যখন বার্লিন পূব আর পশ্চিম দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। আর এই বিভাজন আরো দৃঢ় হয় ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মানি দেয়াল গড়ার পর। তখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পূব আর পশ্চিম। 

এ কাহিনী সকলের জানা আছে। ১৯৮১ সালে সেই দেয়াল ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পর একত্রিত বার্লিন ও একত্রিত জার্মানির চলচ্চিত্র উৎসব হয়ে ওঠে এই “বার্লিনালে”। বার্লিনালর ইতিহাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বার্লিন আর জার্মানিকে প্রতিবিম্বিত করে। রাজনৈতিক ভাবে দ্বিখন্ডিত জার্মানিতে সেই সময়ে চলচ্চিত্র বিষয়ক যে হাইকমিশনার কর্মরত ছিলেন তাঁরই মাথায় এইরকম একটি চলচ্চিত্র উৎসব করার ভাবনার উদয় ঘটে। পশ্চিম বার্লিনের একটি আমেরিকান সামরিক বিভাগ থেকে আর্থিক সহযোগিতা উৎসবটির আয়োজন সফল করে তোলে। আলফ্রেড হিচককের ছবি “রেবেকা” দিয়ে ১৯৫১ সালের ৬ই জুন প্রথম এই উৎসবটির উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দিকে দর্শকরাই প্রতেযেগীতার পুরষ্কার নির্বাচন করতেন। পরে এই উৎসবের স্বর্ণ ও রৌপ্য ভল্লুক নির্বাচন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক জুরিকে। 

শীতল যুদ্ধের সময় কম্যুনিস্ট সরকার  দ্বারা পরিচালিত পূর্ব জার্মানিতেও কিছু কিছু ছবি দেখানো হতো। কিন্তু এই উৎসব ছিল মূলত পশ্চিম জার্মানির উৎসব এবং ১৯৬১ সালে দেয়াল তুলে যখন দুইভাগ করে দেওয়া হয় তখনও। সম্পূর্ণ ভাবে তখনকার পশ্চিম জার্মানির উৎসব হিসেবেই এই উৎসব সংরক্ষিত হয়। ১৯৫১ থেকে ১৯৭৬ সাল অবধি উৎসব-পরিচালক ছিলেন চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ ড: আলফ্রেড বাওয়ার। তিনিই ছিলেন প্রথম পরিচালক। ২০০১ থেকে ২০১৯ সাল অবধি এই উৎসবের পরিচালক ছিলেন ডিটার কসলিক। 

তিনি এই উৎসবকে বিকশিত করেন নানা উদ্যোগে। আমেরিকার বাইরে বিভিন্ন দেশের ছায়াছবি  অর্থাৎ বেশী বেশী আমেরিকা আর হলিউডের  ছবি নয় বরং অনেক জার্মান ও আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে এই উৎসব উদযাপন করেন। ২০২০ সালে শুরু করেন হলিউডের মতো বুলেভার্ড পথ —- পটসডামার প্ল্যাৎস-এর পাশেই রাস্তার মাঝখানে কিছুটা জায়গায় চিত্র তারকাদের সাক্ষর সংরক্ষন করেন তাঁদের স্মরণীয় করে রাখার জন্য। বিখ্যাত জার্মান আমেরিকান অভিনেত্রী মেরিলিনে ডিট্রিশকে দিয়েই এই যাত্রা শুরু করা হয়। 

বর্তমানে বার্লিনালে উৎসব দর্শকের সংখ্যার দিক থেকে দেখতে গেলে  সর্বাগ্রে রয়েছে। কভিড মহামারির আগে ২০২০ সালে এই উৎসবে ৩২,৫০০ টিকেট বিক্রি হয় এবং ১৩০ টি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের শাখা থেকে ১৬.০০০ পেশাদাররা এতে অংশগ্রহন করেন। 

১৯৫১ সাল থেকে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব উদযাপিত হতো গ্রীষ্মকালে — ১৯৭৮ সাল থেকে এই উৎসব উদযাপন শুরু হয় শীতকালে। ফেব্রুয়ারি মাসে কনকনে শীতে শহর কেন্দ্র বার্লিনার প্ল্যাৎস-এ বার্লিনালে উৎসবে নানা দেশের ছবি দেখতে, লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া বিশ্বের নামী দামী অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক-প্রযোজককে এক নজর দেখে নিতে জোয়াড় বইয়ে দেয় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত দর্শক, অংশগ্রহনকারীরা —- বার্লিনবাসীরাও মেতে ওঠে আপন ভূবনে। ইউরোপের কান, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের মতোই এই উৎসবও বিশ্বখ্যাত। এবারের উৎসবে নতুন চমক হলো এই প্রথম বার্লিনালের জুরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী। আর তিনি হলেন লুপিতা নিয়েঙগো। তিনি লেখক, প্রযোজক। তাঁর জন্ম কেনিয়ায়। 

বার্লিনালে ২০২৪ উৎসবের উদ্বোধন করা হবে ১৫ই ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ড ও বেলজিয়ামের যৌথ প্রযোজনার ছবি “স্মল থিংস লাইক দিস” প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। উৎসব চলবে ১০ দিন। শেষ হবে ২৪ শে ফেব্রুয়ারি। পরিচালক কার্লো ছত্রিয়ান ও মারিয়েটে রিজেনবেটের বার্লিনালের দয়িত্ম পালন শিঘ্রই শেষ হবে। এ বছর এপ্রিল মাসের শুরুতেই “বার্লিনালে” চলচ্চিত্র উৎসবের দায়িত্ম নেবেন আমেরিকার ট্রিসিয় টুটেল! এই উৎসবের স্বর্ণ ভল্লুক বা রৌপ্য ভল্লুক জিতে নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় থাকছে ৩০টি চলচ্চিত্র। উৎসব শুরুর প্রাক্কালে সমগ্র জীবনের কর্মকান্ডের জন্য অনারারি গোল্ডেন বিয়ার পুরষ্কার বিজয়ীর নাম ঘোষনা করা হয়েছে। আর তিনি হলেন আমেরিকার পরিচালক, প্রযোজক এবং চলচ্চিত্র কাহিনী লেখক বিখ্যাত মার্টিন সক্রেস। সম্প্রতি সাংবাদিক সম্মেলনে  ফেসটিভেল ডিরেক্টররা  বলেন তাঁরা ফুটবল খেলাকে এই উৎসবের অন্তর্ভুক্ত করতে চান। এর কারনও রয়েছে এবছরই উদযাপিত হবে ইউরোপীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩০ দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। ফুটবলের ক্ষেত্রে ২০০৬-এর পর এটি হবে জার্মানির বড় ক্রীড়া-উৎসব। সমাগম ঘটবে স্টার খেলোয়াড়দের।  

২০১০ সালে বার্লিনালে উৎসবে শারুক খানের উপস্থিতি বার্লিনে আলোড়ন তুলেছিল। এখানকার পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছিল “বলিউড হলিউডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে!” কোন পত্রিকা আরে লিখেছিল “হলিউডের ৩ তারকার ভক্তের সংখ্যার চেয়েও শাহরুখের ভক্ত সংখ্যা বেশী। সেবার উৎসবে শারুক খানের ছবি দেখার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকে শাহরুখ ভক্ত সিনেমাপ্রেমীরা ভীড় করেছিল বার্লিনে। এদের ভেতর মহিলাদের সংখ্যাই ছিল বেশী। কিশোরী, তরুনি — বয়সীরাও বাদ যান নি। অল্প সময়ের ভেতর সব টিকেট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সে এক কাহিনী বটে। তবে এ বছর বার্লিনালে উৎসবে বলিউডের প্রাধান্য না থাকলেও এবারে এ উৎসবের ফোরাম বিভাগে ভারতের সাতটি ছবি প্রদর্শিত হবে। 

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ