ছবি: সংগ্রহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসিকে হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মার্টিন মইসি, সাবেক এক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক এক পুলিশ প্রধানসহ ৫০ জনকে অভিযুক্ত করেছেন দেশটির বিচারপতি ওয়ালথার ওয়েসার ভলতেয়ার। এ হত্যার ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্বে থাকা ওই বিচারপতি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।
ফাঁস হওয়া ১২২ পৃষ্ঠার একটি নথি গত সোমবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আয়িবো পোস্টে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, মার্টিন মইসি হাইতির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্লদ জোসেফের সঙ্গে মিলে স্বামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। স্বামীকে খুন করার মধ্য দিয়ে মার্টিন মইসি নিজেই প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন। ফাঁস হওয়া ওই নথিতে হত্যার পরিকল্পনার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট মইসিকে হত্যার ঘটনায় ৫০ জনের মতো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ওয়ালথার ওয়েসার ভলতেয়ার।
প্রায় ২০ জন দুর্বৃত্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই কলম্বিয়ার ভাড়াটে খুনি।
২০২১ সালের জুলাইয়ে নিজ বাসভবনে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হন জোভেনেল মইসি। এ হামলায় তাঁর স্ত্রী মার্টিন মইসি আহত হন। মার্টিন মইসিকে অভিযুক্ত করার কারণ হিসেবে নথিতে বলা হয়েছে, ‘তাঁর জবানবন্দিগুলো এতটাই অসংগতিপূর্ণ যে তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন।’
মার্টিন মইসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, গ্রেপ্তারের বিষয়টি অন্যায্য।
এ হত্যাকাণ্ডে হাইতির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্লদ জোসেফ এবং জাতীয় পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক লিওন চার্লসও জড়িত ছিলেন বলে ‘যথেষ্ট ইঙ্গিত’ মিলেছে। আয়িবো পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, মইসিকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কারা, তাঁদের কারা অর্থায়ন করছে, সে ব্যাপার ফাঁস হওয়া ওই নথিতে সুস্পষ্ট কিছু উল্লেখ করা নেই।
মিয়ামি হেরাল্ড সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাইতির সাবেক প্রধানমন্ত্রী জোসেফ অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।
তবে হেনরির কার্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ওই বিচারপতি স্বাধীন। তিনি আইন ও তাঁর নিজস্ব বিবেকবুদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে মুক্তভাবে আদেশ দিতে পারেন।
মইসিকে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে আলাদা এক মামলায় বিচারকাজ চলছে। হত্যার পরিকল্পনার কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ফ্লোরিডাতে হওয়ায় দেশটিতেও বিচারকাজ চালাতে হচ্ছে। হাইতির প্রেসিডেন্টকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সেখানে ১১ জনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে।
১১ আসামির মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তাঁরা মইসিকে অপহরণের জন্য কলম্বিয়ার ভাড়াটে খুনিদের ঠিক করেছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে অপহরণের পরিকল্পনা পাল্টে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
প্রেসিডেন্ট মইসি নিহত হওয়ার পর থেকে হাইতিতে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা চলছে। এখন পর্যন্ত সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়নি। ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলো সামনে এনে এবং সশস্ত্র অপরাধী চক্রের আধিপত্য বাড়ার কথা বলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হেনরি অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন স্থগিত করেছেন।
মন্তব্য করুনঃ