• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২২শে বৈশাখ ১৪৩১ বিকাল ০৫:৫৬:০৬ (05-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

মূর্ছা যাচ্ছেন বৃদ্ধ বাবা, রিপনের সন্তানদের সঙ্গে কাঁদছে গ্রামবাসী!


শুক্রবার ১২ই এপ্রিল ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:১৭



মূর্ছা যাচ্ছেন বৃদ্ধ বাবা, রিপনের সন্তানদের সঙ্গে কাঁদছে গ্রামবাসী!

ছবি: সংগৃহীত

চ্যানেল এস ডেস্ক: 

দৃষ্টিশক্তিহীন বৃদ্ধ বাবা জয়নাল আবেদিন হাওলাদার বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বাবাকে হারিয়ে চার সন্তানের গগণবিদারী কান্নায় উপস্থিত কেউ চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি রিপন হাওলাদার (৩৫) চলে গেছেন পরপারে। ঢাকার সদর ঘাটে ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে দুর্ঘটনায় নিহত ৫ জনের মধ্যে রিপন হাওলাদার একজন।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বেলা ১১ টার দিকে পটুয়াখালী সদর উপজেলার শিয়ালী গ্রামে নিজ বাড়িতে তার মরদেহ নিয়ে এলে হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

রিপন ঢাকার বাড্ডার নতুন বাজার এলাকায় থাকতেন। পাঠাও শেয়ারিং রাইডে মোটরসাইকেল চালাতেন। এর আগে স্টার জুস কোম্পানিতে কাজ করলেও এক বছর আগে ছেড়ে দিয়ে শেয়ার রাইডিংয়ে যোগ দেন তিনি।

‘মসজিদে ১০০ টাকা দিছি আর আল্লাহর কাছে বাবার প্রাণ ভিক্ষা চাইছি, কিন্তু আল্লায় আমার কথা শুনলো না’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে নিহত রিপন হাওলাদারের ছোট মেয়ে মেঘলা। মেঘলা আরও বলে, নামাজ পড়ছি আর আল্লাহর কাছে মানত করছি বাবায় সুস্থ হইলে সবাই মিলে মির্জাগঞ্জ ইয়ার উদ্দিন খলিফা সাহেবের মাজারে যামু। আমার বাবারেতো আল্লায় নিয়া গেল।’ 

নিহত রিপনের ছেলে রিফাত বলে, ‘চানরাইতে বাবার সাথে কথা হইছে হে আমাগো ঈদের জামা কাপড় কেনার জন্য দুই হাজার টাকা পাঠাইছে আর কইছে ঈদের পরদিন আইতাছি তোগো নিয়া জামা কাপড় কিন্না দিমু হানে। কিন্তু কাইল লঞ্চে ওডার সময় তার এক্সিডেন্ট হইছে। বাবায় আমাগো ছাইড়া চইল্যা গেছে।’

শিয়ালী গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার ৩ মেয়ে, ১ ছেলে, দৃষ্টিশক্তিহীন বৃদ্ধ বাবা, ৫ ভাই আর ৭ বোনসহ আত্মীয়-স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

নিহত রিপনের ছোট ভাই আল আমিন জানান, ঈদের দিন বিকেলে ভাতিজিকে নিয়ে বাড়ি আসার জন্য বরগুনাগামী তাশরিফ-৪ লঞ্চে ওঠার জন্য ঢাকার সদরঘাটে পন্টুনে দাঁড়ান। এ সময় অপর একটি লঞ্চের ধাক্কায় তাশরিফ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে গেলে রিপনের মাথায় আঘাত লাগলে সেখানেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্বজনরা জানান, রিপন হাওলাদারের আয়েই মূলত চলতো তাদের সংসার। একান্নবর্তী পরিবারে তার রয়েছে ৩ মেয়ে এক ছেলেসহ চার সন্তান, সদ্য বিধবা স্ত্রী, ১২ বছর ধরে দৃষ্টিশক্তিহীন বৃদ্ধ বাবা আর ৫ ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই রাসেল, মুছা আল-আমিন কলেজে পড়াশোনা করছে। মেজ ভাই সোহেল হাওলাদার (৩০) অটো রিকশা চালিয়ে সামান্য রোজগার করে সংসারে যোগান দেয়ার চেষ্টা করছেন। ৭ বোনের সবার বিয়ে হলেও তাদের খোঁজখবর রাখতেন রিপন। বছরে শুধু ঈদের সময় বাড়িতে আসতেন তিনি।

রিপনের সন্তানদের মধ্যে রিয়ামনি ৭ম শ্রেণিতে, রিফাত ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে, মেঘলা, ৫ম শ্রেণিতে আর বৃষ্টি ৩য় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাই আল আমিন বলেন, ‘ভাইয়ের পাঠানো টাকায় আমাদের তিন ভাইয়ের লেখাপড়াসহ চলতো সংসার।’

রিপনের স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর ঢাকায় স্টার জুস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেখানকার বেতনে সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় এক বছর আগে চাকরি ছেড়ে পাঠাওয়ে মোটর সাইকেল দিয়ে শেয়ার রাইডিংয়ে যোগ দেন। তার আয় দিয়েই মূলত ১২ সদস্যের একান্নবর্তী পরিবারটি চলতো। কিন্তু এখন কীভাবে চলবে আমাদের সংসার?

শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে রিপনের মরদেহ পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম জানান, পরিবারটিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ