• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ০৬:১৮:২৩ (26-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:

রপ্তানি ও প্রবাসী আয় ডলার-সংকটকালে দুই স্বস্তি


সোমবার ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২২ ভোর ০৪:৪৬



রপ্তানি ও প্রবাসী আয় ডলার-সংকটকালে দুই স্বস্তি

ডলার। ছবি: সংগৃহীত

কয়েক মাস ধরেই ডলার-সংকটে দেশের অর্থনীতি কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যেই সুখবর এসেছে দুটি। যেমন গত আগস্ট মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। একই সঙ্গে পণ্য রপ্তানিও ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে আমদানি ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তি—দুটোই জুলাইয়ের তুলনায় কমেছে। ফলে ডলারের সরবরাহ কিছুটা হলেও বাড়বে, দামের ওপর চাপ কমবে।

মোট পণ্য রপ্তানির ৮৩ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। রপ্তানি আদেশ কমছে বলে নানা শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন পোশাক মালিকেরা। এখন দেখা যাচ্ছে তাঁদেরও রপ্তানি আয় গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি।

মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেখানকার মানুষ গাড়ির জন্য জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের বাইরে কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করেছে, যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে।

তারপরও পোশাকমালিকেরা বলছেন, সংকট পুরোপুরি কেটেছে বলা যাবে না। নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আমাদের জানিয়েছেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় তাঁদের গুদামে পণ্যজট তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে সুতার দাম কমার অপেক্ষায় আছেন। সে কারণে ক্রয়াদেশ দেওয়া শ্লথ করেছেন। ইতিমধ্যে সুতার দামও কেজিপ্রতি ৫ ডলার থেকে ৪ ডলারের নিচে নেমে এসেছে।’

রপ্তানির পরিসংখ্যান

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার রপ্তানি আয়ের এ হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২০-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৮৫৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। আবার এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। শুধু আগস্টেই রপ্তানি হয়েছে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। গত জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩৯৮ কোটি ডলারের পণ্য। তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয়ে ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় সামগ্রিকভাবে রপ্তানি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। অন্য শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি বেড়েছে। তবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি ১৪ শতাংশ কমেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত আগস্টে ৩৭৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ আয় গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। জুলাইয়ে পোশাক রপ্তানি ছিল ৩৩৭ কোটি ডলার আর প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৭১১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হোম টেক্সটাইল থেকে এসেছে। এ আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত জুলাই-আগস্টে ২২ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ১৮ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশ। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বিদায়ী অর্থবছর ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। তখন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

প্রবাসী আয়েও স্বস্তি

আগস্ট মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। ওই মাসে পবিত্র ঈদুল আজহা ছিল। তবে আগস্টে বড় কোনো উৎসব ছিল না। তা সত্ত্বেও আগস্টে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। গত বছরের আগস্টে ১৮১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। তার মানে গত মাসে প্রবাসী আয়ে ১২ দশমিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের কারণে আমদানি চাপ কমে আসছে। আবার ডলারের দাম বাড়ায় অনেকে আমদানি কমিয়ে এনেছেন। গত আগস্টে ঋণপত্র খোলা হয়েছে প্রায় ৫৬৫ কোটি ডলারের, জুলাইয়ে যা ছিল ৬২২ কোটি ডলার। আর আগস্টে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৪৭ কোটি ডলার, জুলাইয়ে যা ছিল ৭৪২ কোটি ডলার। তার মানে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে ঋণপত্র খোলা কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ ও ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে আমাদের মূল ক্রেতা দেশে ভোক্তা চাহিদা কমলেও রপ্তানিতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি থাকবে। কারণ, নানাবিধ টানাপোড়েনে চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরছে। তার সুবিধা আমরা পাচ্ছি। ভবিষ্যতেও পাব। তা ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে রপ্তানিকারকেরাও ক্রেতাদের ভালো দাম অফার করতে পারছেন। অন্যদিকে গত অর্থবছর সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসে গেছেন। তার একটি অংশ আবার মধ্যপ্রাচ্যে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠছে। তা ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বর্তমানে ডলারের ভালো দাম দেওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন প্রবাসীরা।’

সিপিডির এই গবেষক বলেন, বিগত মাসগুলোতে ডলার নিয়ে অস্থিরতা ছিল। সেটি কিছুটা স্থির হয়েছে। তবে সুস্থির হয়ে যায়নি। ফলে ডলার বাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি আরও কিছুদিন বজায় রাখতে হবে।

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ