মো. মানিক মিয়া, লৌহজং প্রতিনিধিঃ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আমগো প্রাণ নিয়ে যাইতেছে। সে সাথে রাক্ষুসে পদ্মার ছোঁবলে পড়ছি আমরা। করোনার কারণে বাসা থেকে বের হতে পারি না আমরা। কোন কাম-কাইজও নাই। খেতে পারি না ঠিক মতো অহন ঘরবাড়ি কেমনে সরামু। এমন কান্নার সুরে দুঃখের কথা বলছিলো মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর শেখ।
তিনি আরও বলেন, সর্বনাশা পদ্মার রাক্ষুসে ছোঁবলে রোববার রাতে আমার বোনের ভিটেমাটি বিলীন হয়ে গেছে। অহন আমার বোন শিল্পী বেগম খড়িয়াতেই অন্যের বাসায় গিয়ে উঠেছে। আমি আমার পরিবার নিয়ে অনেক ভয়ে আছি। সারাক্ষণ নদীর ঢেউয়ের আওয়াজ কানে লাগে। কখন যে আমার ভিটেমাটি নিয়ে যায় উপর আল্লাহই জানে। চলছে বর্ষামৌসুম। নদীতে পানি থৈথৈ করছে। বয়ে চলছে বাতাস। সে সাথে নদীর পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাটায় কমে গেলেও জোয়ারে তার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংবাসী পড়েছে বিপাকে। প্রতিবছর কোন না কোন গ্রাম ভেঙ্গে লৌহজংয়ের মানচিত্র আঘাত আনছে সর্বনাশা পদ্মায়। উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়নের ১ নং ও ২ নং খড়িয়া গ্রাম রয়েছে ঝুঁকিতে। সে সাথে হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামের দৃশ্য বেশি ভয়াবহ। গতবছর নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে পদ্মার চর কেটে নদীর গতিবেগ পরিবর্তন করেন স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়নবোর্ড। খড়িয়ার বরাবর পদ্মা নদী ও চর কাটার ফলে খড়িয়া ২ নং গ্রামটি রাক্ষুসে পদ্মার ছোঁবল থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু ১ নং খড়িয়া ও দক্ষিণ হলদিয়ার দিকে স্রোতের গতিবেগ পরিবর্তন হওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়ে গ্রাম দুটো।
প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের ভিটেমাটি বিলীন হয়ে যায় গতবছর। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দক্ষিণ হলদিয়া, ১নং ও ২ নং খড়িয়া গ্রামগুলো রয়েছে পদ্মার ভাঙ্গানের ঝুঁকিতে। সে সাথে ২ টি মসজিদও আছে ঝুঁকিতে। তিনটি গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের এ বছর পদ্মায় বিলীন হবার পথে। এ বছর রাক্ষুসে পদ্মার ছোঁবল থেকে বাঁচানোর দাবিতে খড়িয়ার বাসিন্দা রাসেল হোসেন, মনির হোসেন লিন্ডাসহ বেশ কয়েকজন জানান, নদী ভাঙ্গা হলে জিও ব্যাগ ফেলানো হয়। এতে কোন লাভ হয় না। নদী ভাঙ্গার সময় যেসব জিও ব্যাগ ফেলা হয় সেগুলো স্রোতেই নিয়ে যায়।
নদীর ভাঙ্গারোধের ব্যবস্থা করতে হবে। বেরি বাঁধ দিয়ে ব্লক ফেলে নদী শাসনের কাজ করলে খড়িয়াসহ লৌহজংবাসী পদ্মার ছোঁবল থেকে বেঁচে যাবে।সরকারের কাছে একটাই দাবী আমরা ত্রান চাই না, আমাদের নদী শাসন করার ব্যবস্থা করেদিন। বর্ষামৌসুমে ভাঙ্গন দেখতে আসেন মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যান, প্রশাসন কিন্তু দেখা পরে কোন সামান্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ বলে দাবী এলাকাবাসী। এমন অভিযোগ দিয়ে স্থানীয় এক খড়িয়া বাসিন্দা জানান, ছোট থেকেই পদ্মানদীর ভাঙ্গা দেখছি। কই এখনও তো কোন নদী শাসনের কাজ দেখলাম না। জিও ব্যাগ ফেলেই তাঁদের দায়িত্ব শেষ। বড় বড় এমপি, মন্ত্রী আছে। দেখে আশ্বাস দেয় চলে যায়। আমাদের ভিটেমাটি বাঁচানোর কথা কেউ বলে না। খড়িয়ায় গতবছর শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এবছরও বিলীন হবার পথে। মহামারি করোনাভাইরাস হলে মানুষ মরে গেলেও তাদের ভিটেমাটিটুকু থাকে। কিন্তু এ নদীতে ভেঙ্গে গেলে কিছুই থাকবে না।
কুমারভোগ ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান তালুকদার জানান, আমি জনপ্রতিনিধি সব সময় জনগণের কথাভাবী। কুমারভোগবাসীর সুখ-দুঃখের সাথী হয়েই সব সময় থাকতে চাই। খড়িয়া গ্রাম গতবছরও পদ্মায় ভেঙ্গেছে। এ বছরও ভাঙ্গার আশঙ্কা রয়েছে। গতরোববার একটি পরিবারের ভিটেমাটি ভেঙ্গেছে। আমি দেখে আসছি। উরধতন কর্মকতাদের সাথে কথা বলে এর ব্যবস্থা নিবো। গত বছর জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়নবোর্ড কিন্তু সে বিল এখনও পানি উন্নয়নবোর্ড পরিশোধ করেনি। লৌহজংয়ের খড়িয়া, দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামগুলো ঝুঁকিপূণ। কখন কার সর্বনাশ করে উপর আল্লাহই জানে।
আমরা খুব শীঘ্রুই নদী ভাঙ্গার প্রতিরোধে কাজ করবো। লৌহজং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মু. রাশেদুজ্জামান জানান, লৌহজংবাসীর পাশে উপজেলা প্রশাসন সব সময় থাকবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান মহোদয় লৌহজংবাসীর জন্য কাজ করে সে আজ করোনায় আক্রান্ত। আমরা সব সময় লৌহজংবাসীকে সেবা দিতে চাই। সে লক্ষ্যে নদী ভাঙ্গনরোধের ব্যবস্থা নিয়ে জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার মহোদয়ের সাথে কথা বলে এ ব্যবস্থা নিবো।