নিকলী হাওর
খোলামেলা পরিবেশে স্নিগ্ধ প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে ঘুরে আসতে পারেন কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে । খুব অল্প বাজেটের মাঝেই ঘুরে আসতে পারেন নিকলী হাওর (Nikli Haor) থেকে । হাওড়ের দ্বিগন্ত বিস্তৃত স্বচ্ছ জলরাশির বুকে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, পানির মাঝে জেগে থাকা দ্বীপের মত গ্রাম, রাতারগুলের মত ছোট জলাবন, হাওড়ের তাজা মাছ ভোজন। সব মিলিয়ে একদিনের ট্যুরের জন্য আদর্শ একটি জায়গা।
শহরের পাশেই নিজের মত করে নিরিবিলিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সুন্দর একটি দিন। ইচ্ছে হলে বড় নৌকা ভাড়া নিয়ে রাতে নৌকায় থাকার ব্যবস্থা আছে। হাওরের পানির রুপ দেখতে চাইলে আপনাকে বর্ষাকাল বা তার পর পর যেতে হবে । তাই নিকলী ভ্রমনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুলাই- সেপ্টেম্বর মাস ।
বর্ষাকালে বিশাল হাওর এলাকায় অথৈ জলরাশি দেখলে সাগরের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এখানে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হল কূর্শা থেকে মোহরকোনা বিস্তৃত ৭ কিলোমিটার ব্যাপী বেড়ীবাঁধ, কামালপুর থেকে দামপাড়া পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বাঁধ,সোয়াইজনী ও নরসুন্দা নদীর ব্রীজ। হাওরের বিশাল জলরাশির মাজে দ্বীপ সদৃশ ডুবো গ্রাম সিংপুর,ঘোড়াদিঘা,ছাতির চর। হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গত কয়েক বছর যাবত দেশের ভিবিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসছে। প্রতিদিন বিশেষ করে ছুটিরদিনে হাজারো ভ্রমণ পিয়াসীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে নিকলীর হাওর। প্রতিদিনই বাস, মাইক্রো, সি এনজি,বাইক,নৌকা যোগে আসা শুরু করেছে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। তারা ঘুরে ঘুরে দেখছে হাওর,নদী আর বিভিন্ন স্থাপনা ।
যেভাবে ঘুরবেন
খাওয়া দাওয়া ও প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ইজিবাইকের বেড়িবাধের শেষ প্রান্তে চলে আসুন। সেখানে দরদাম করে ঘন্টা প্রতি নৌকা ঠিক করে নিবেন হাওড় ঘুরে দেখার জন্য । ছোট নৌকা ভাড়া করতে ঘন্টা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং একটু বড় নৌকা ভাড়া করতে ঘন্টা প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হবে। আরো বেশি সময়ের জন্য ভাড়া করলে খরচ কিছুটা কম হবে । এক নৌকায় অনায়াসে ১০-৩০ জন পর্যন্ত উঠতে পারেন ।
আপনার হাতে কত সময় আছে সেই অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করুন । চেষ্টা করবেন অন্তত ৩ ঘন্টা হাতে থাকে নৌকা দিয়ে ঘুরার জন্য । নৌকা দিয়ে হাওরে ভাসতে ভাসতে চারপাশের মোহনীয় রুপ দেখতে প্রথমেই চলে য়েতে পারেন ছাতিরচর গ্রামে । সিলেটের জলাবনের মুগ্ধতা দেখতে দেখতে দু’চোখ জুড়িয়ে নেয়ার পাশাপাশি শীতল জলে গা ঢুবিয়ে শলীর শান্ত করার কাজটা এখানেই সেরে ফেলতে পারেন।
তবে ভরা বর্ষায় পানি অনেক বেশি থাকে । তাই পানিতে সাঁতার কাটতে চাইলে সাথে করে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাবেন। জলাবনের সৌন্দর্য দেখে তারপর নৌকা নিয়ে চলে যান চর মনপুরায় । পানি বেশি হলে যদিও ডুবে যায় তবে কম থাকলে আধো ভাসমান এই চরে ঘুরে বেড়াতে পারেন কিছুটা সময় ।তারপর উন্মুক্ত হাওরে শেষ বিকেলের সুর্য দেখতে দেখতে পুনরায় নিকলী বেড়ি বাঁধে এসে বাড়ি ফেরার পথ ধরতে হবে।
থাকার ব্যবস্থা
নিকলীতে থাকার কোন সুব্যবস্থা নেই । সাম্প্রতি চারু হওয়া চেয়ারম্যান গেস্ট হাউজ অথবা ভালো উপজেলা ডাক বাংলোতে থাকতে পারবেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে থাকতে পারবেন । চাইলে নৌকায় বা ক্যাম্পিং করে রাত পার করতে পারেন ।
খাওয়ার ব্যবস্থা
মূলত নিকলীতে ভালো মানের খুব বেশি খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে বাজারে বেশ কয়েকটা রেস্তোরাঁ আছে।
মোটামুটি মানের তাজা মাছের রান্না দিয়ে খেতে ভালোই লাগবে।
এছাড়াও বেড়িবাঁধে ঢোকার সময়ই একটা রেস্তোরাঁ পড়ে; সেই রেস্তোরাঁয় নদীর তাজা মাছের আঞ্চলিক স্বাদের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
নিকলী যাবার উপায়
ঢাকা থেকে বাইক নিয়ে যেতে পারেন কিশোরগঞ্জ শহরে। সেখান থেকে নিকলি ঘাট । ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে ঘুরে দেখুন হাওর ।
বাসে যেতে চাইলে রাজধানী ঢাকার মহাখালী বাসস্টেন্ড থেকে অনন্যা সুপারে করে পুলেরঘাট বাজারে নেমে সিএনজি করে চলে জেতে পারেন নিকলীর হাওর। অথবা মহাখালী বাসস্টেন্ড থেকে জলসিড়ি বাসে করে কটিয়াদি এবং সেখান থেকে নিকলি হাওড়।
ট্রেনে আসলে গচিহাটা বা মানিকখালি স্টেশনে নেমে গেলে কম সময়ে নিকলী হাওড়ে যাওয়া যাবে ।
মনে রাখবেন, বর্ষার শেষ দিকে হাওর ভ্রমনের উপযুক্ত সময় । তবে নিকলী হাওর যেতে চাইলে খুব সকালে রওনা ঢাকা থেকে রওনা হতে হবে ।
খরচ
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রেনে ১৭৫ টাকা / বাস ভাড়া ২০০ টাকা। কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলি সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা প্রতিজন।
নিকলীর আরোও কিছু দর্শনীয় স্থান
গুরই শাহী জামে মসজিদ-রিকসা বা মটরসাইকেলে করে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন।
নিকলী বেড়ি বাধঁ-নিকলী উপজেলা অফিসের সামনে থেকে বেড়িবাদ শুরু তাই হেটে-হেটে দেখা যাবে তার সৌন্দর্য ।
পাহাড় খাঁর মাজার-নিকলী থেকে ট্রলারে করে ও মটর সাইকেলে করে যাওয়া যায়।
গুরই প্রাচীনতম আখড়া-কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় গুরই ইউনিয়নে এই আখড়া অবস্থিত। শুকনো মৌসুমে রিকসা, মটর সাইকেলে বা সিএনজি তে করে যাওয়া যায় । কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নৌকা বা ট্রলারে যেতে হবে ।