নুরুল আমিন দুলাল ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি: কাগজে কলমে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। বাস্তবে পৌরবাসীরা পাচ্ছেনা কোন নাগরিক সুবিধা। ভাংগাচূড়া রাস্তাঘাটের অধিকাংশই চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। নেই রাস্তার লাইট, ড্রেনেজ ও পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা।
শতকরা ৮০টি হোল্ডিং এ নেই পানির সংযোগ। যে সামান্য সংযোগ রয়েছে তাতেও পাচ্ছেনা পর্যাপ্ত পানি। অথচ হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে কয়েক’শ গুন। অভিযোগ রয়েছে- প্রয়োজন না থাকা স্বত্ত্বেও প্রথম শ্রেণীর কাঠামোগত আইনের ফাঁকে পৌনে দুই কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহন করে মেয়র একক সিদ্ধান্তে নিয়োগ দিয়েছে ১৭জন নতুন কর্মচারী। চলছে আরো ৬ জনের নিয়োগ বাণিজ্যের পাঁয়তারা। এবারের টার্গেট এক কোটি টাকা। গত দু’মাস পূর্বে গোপনে ৮০ লক্ষ টাকার টেন্ডার জালিয়াতি করেছিল মেয়র ইসমাইল খোকন।
পরে অবশ্য বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পেলে এবং টেন্ডার কমিটির সভাপতি প্যানেল মেয়র কাজী নাজমুল কাদের গুলজারের চরম বিরোধীতায় তা বাতিল করে পুনঃ টেন্ডার আহবান করতে বাধ্য হয়েছে মেয়র। যা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত হবে। এখন অবশ্য এই টেন্ডার সমূহের মধ্যে মেয়র নিজে পূর্বে বৈদ্যুতিক বাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে অর্থ আত্মসাৎ ও মোহাম্মদীয়া হোটেলের সম্মুখস্থ মেইন রোডের ড্রেন নির্মণের কাজ উল্লেখ থাকলেও তার সিডিউল বিক্রি করছেননা বেআইনীভাবে।
নানান অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে মেয়রের অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিশাল চিত্র। পৌরসভা এলাকার জমি বিক্রির ২% উৎস কর বাবদ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে পৌরসভার ব্যাংক একাউন্টে (পৌরসভার ফান্ডে) গত পাঁচ বছরে জমা পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। এ টাকা সম্পর্কে জানেন না কোন কাউন্সিলর বা কর্মকর্তা। এ টাকার আয়-ব্যায় নিয়ে প্রশ্ন সকলের। গরুর বাজারের ডাক না দিয়ে মেয়র নিজে একয় বছর তার লোকজনদের দিয়ে হাসিল উঠিয়ে তা আত্মসাৎ করছেন।
খাস কালেকশনের নামে নামমাত্র সামান্য কিছু টাকা জামা দিয়েছেন পৌরসভা রাজস্ব ফান্ডে। পৌরসভা বঞ্চিত হয়েছে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব প্রপ্তি থেকে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনে সরকারের দেয় বিশ লক্ষ টাকার পুরোটাই আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে মেয়রের বিরুদ্ধে। জানাযায়, এমপি পাপুলের দেয় মশার ওষুধ ২/৩ দিন কিছু স্থানে ছিটিয়ে সরকারি ওই টাকাটা আত্মসাৎ করেছে মেয়র। এছাড়া পৌর শিশুপার্ক নির্মাণের নামে ডাকাতিয়া নদীর পশ্চিম পার্শ্বস্থ ওয়াপদার জমির উপরস্থ বিপুল সংখ্যক প্রাচীন বিশালাকার কাঠ গাছগুলো কেটে বিক্রি করে ৮৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে মেয়র।
হয়নি শিশুপার্ক নির্মাণ। সরকারি অনুদান, এডিপি ফান্ড, রাজস্ব আদায় সহ অন্যান্য খাত থেকে ৫ বছরে পৌরসভার আয় হয়েছে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা। অথচ বাস্তবে ২৫ লাখ টাকার উন্নয়নও চোখে পড়েনা পৌরবাসীর। প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) ও গ্রাচ্যুয়েটি ফান্ড (জিএফ) ব্যতীত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোট মাসিক বেতন ২৫,০৮,৫৭৫/= টাকা। ১২ মাসের বেতন বকেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। গত জুলাই ২০২০ইং প্রর্যন্ত মোট বকেয়া বেতনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২,৫৪,২১,৭৬৯/= টাকা। এছাড়া আনুতোষিক,
ভবিষ্য তহবিল ও অন্যান্য ভাতার বকেয়ার পরিমাণ ৮,৭৫,৭৫,৩৫১/= টাকা। হিসেব মতে, জুলাই ২০২০ইং প্রর্যন্ত মোট বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১,২৯,৯৭,৩১৫/= টাকা। সূত্রে জানাযায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পি এফ এবং জি এফ এর টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকার কথা, কিন্তু তা নেই। এতে ভবিষ্যত দুঃশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। এদিকে আগষ্ট ২০২০ইং প্রর্যন্ত পৌরসভার কাছ থেকে পল্লী বিদ্যুতের বকেয়া পাওনা রয়েছে দশ লক্ষাধিক টাকা।
রায়পুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহসান মাল বলেন, পৌরসভার মেয়রের কাছে আমাদের কোন মূল্যায়ন নাই। উনি ওনার খেয়াল খুশিমত পৌরসভা চালাচ্ছেন কোন বিষয়েই আমাদের জিজ্ঞেস করেন না। কোন মাসিক মিটিং করেনা মেয়র, অথচ ২/৩ মাস পরপর কাউন্সিলরদের ফোনে ডেকে এনে জোর-জবরদস্তি রেজুলেশনে স্বাক্ষর করিয়ে নেন মেয়র।
আমরা তার কছে জিম্মি। ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সগীর আহমেদ বলেন, মেয়র কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে খাচ্ছেন। পাগলের মত হঠাৎ করে পূর্বের ১ হাজার টাকার হোল্ডিং ট্যাক্সকে এক লাফে বাড়িয়ে ২০/২৫ হাজার টাকা নির্ধারন করায় মানুষের মাঝে মারাত্মক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পৌরবাসী ১ম শ্রেণীর পৌরসভার কথা দূরে থাক ইউনিয়নবাসীর সমপরিমাণ সেবা টুকুও পাচ্ছেনা। মেয়র প্রথম বছর সাংবাদিক সম্মেলন করে পৌরসভার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
পরবর্তী চার বছর কোন বাজেট ঘোষণা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। মেয়রের অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ও দুদকের তদন্ত দাবী করেন এ কাউন্সিলর। বাজারের ব্যবসায়ী ভূঁইয়া ট্রেডার্সের মালিক কালাম ভূঁইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেয়র বাজারের ডাক দিয়ে এখন ফুটপাতের হকার ও ভ্যানগাড়ী থেকে দৈনিক খাজনা আদায় করছেন।
যাতে অবৈধ ব্যবসায়ীরা বৈধতা পেয়ে গেছেন। হকার আর ভ্যানগাড়ীর কারনে বাজারে জ্যামের সৃষ্টি হয়েছে, দোকানের সামনে ভ্যানগাড়ী রাখার কারনে আমাদের ব্যবসার মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। দেনায়েতপুরের অধিবাসী মোতালেব মিয়া বলেন, মেয়র অবৈধ অটোরিকশা (মিশুক) এর কাছ থেকে ১০ টাকা করে টোল নিয়ে অবৈধ এসব অটোকে বৈধতা দিয়ে শহরের রাস্তাকে রাজধানীর মত জ্যামের শহরে পরেন।